গত রোববার নিউইয়র্ক শহরে  ইউ এস বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই) আয়োজন করে এক অর্থনৈতিক সেমিনারে্র এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চেম্বারের পরিচালক শেখ ফরহাদ। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের প্রধান কার্যনির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট লিটন আহমেদ। নিউ ইয়র্কের ম্যারিয়ট হোটেলে আয়োজিত স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রবাসীদের অবদান শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।

স্বাগত বক্তব্যে ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ও প্রধান কার্যনির্বাহী,জনাব মো. লিটন আহমেদ তিনি বলেন, “ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই) পারস্পরিক বাণিজ্য প্রসারে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয় দেশের দূতাবাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।” তিনি বিশ্বাস করেন যে, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে ও ব্যবসায় উন্নয়নে ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই) এমন একটি সংস্থা যেখানে বাণিজ্যের নতুন ধারণাসমূহ অংকুরিত হয়।

স্বাগত বক্তব্যে ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ও প্রধান কার্যনির্বাহী,জনাব মো. লিটন আহমেদ

মো.লিটন আহমেদ তিনি বলেন হাঁটিহাঁটি পা পা করে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০টি বছর পার করলো বাংলাদেশ। এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। রূপকল্প ২০২১-এর এ বছরটি একটু ব্যতিক্রমী এ কারণে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি।

২০২১ সালে পৌছে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে অন্য রকম এক বাংলাদেশ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠা, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা সূচকে অগ্রগতির পর বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে পৌঁছানো। যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

করোনাকালেও অর্থনীতির শক্তি জোগাচ্ছে রেমিট্যান্স,দেশের বর্তমান জিডিপিতে প্রায় ১২ শতাংশ অবদান রেখে চলা রেমিট্যান্স হয়ে উঠেছে দেশের উন্নয়ন ও মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীতির উল্লেখযোগ্য অংশীদার। করোনাকালে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তো। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সেই বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। শুধু আর্থিকভাবেই নয়, করোনা মোকাবিলায় সরকারের মনোবল ধরে রাখতেও বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী ।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স যা দেশের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ১৬৮টি দেশে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ প্রবাসী নিরন্তর দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাই প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে স্থানীয় সব পর্যায়ে প্রবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মশিউর রহমান বলেন, প্রবাসীদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে এবং প্রবাসীরা দেশে যে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন তা দেশের উন্নয়নে এক বিশাল ভূমিকা পালন করছে।

বর্তমানে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং আমদানি বাণিজ্য ও অর্থ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করছে সুতরাং প্রবাসীরা তাদের জান-মালসহ সব বিষয় অগ্রাধিকার পাওয়ার অধিকারী। প্রবাসীদের প্রশ্নের জবাবে মশিউর বলেন, দেশে বিনিয়োগকারীর এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি নেই। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এনআরবি চেয়ারপারসন সেকিল চৌধুরী বলেন, গত ৫০ বছরে প্রবাসীরা বৈধ পথে বাংলাদেশের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ২৩১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি অর্থ এছাড়াও তারা নিয়মিত সফরকালে সঙ্গে করে আরও অনেক বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে যান যা আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক বিশাল ভূমিকা পালন করছে। বিনিয়োগের সুযোগগুলো সাধারণ প্রবাসীদের নাগালের মধ্যে নিয়ে এলে দেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগ এবং তাদের অর্থনৈতিক অবদান বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, আমরা জানি সরকারি নীতিমালায় এ বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি নির্বাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি তার প্রবন্ধ প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সহায়তা এবং প্রবাসে এনআইডি কার্ড প্রাপ্তি ও পাসপোর্ট নবায়ন সহজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সেকিল চৌধুরী বলেন, আমরা মনে করি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যারা বিনিয়োগের ব্যাপারে কাজ করছেন এবং নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন তারা এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নিলে প্রবাসীদের প্রচুর বিনিয়োগ দেশে আনা সম্ভব। বিশেষ করে সাধারণ শ্রেণীর প্রবাসীদের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য তাদের কাছে তথ্য ও যোগাযোগ বাড়ানো একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেমিনারে বক্তব্যকালে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার বলেন, এনআইডি কার্ড করতে সশরীরে বাংলাদেশে যেতে পারছেন না অনেক প্রবাসী।

অথচ বিনিয়োগসহ সব ক্রয় বিক্রয়, এমনকি মামলা মোকদ্দমার সময়েও এনআইডি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কন্স্যুলেটে এনআইডি ইস্যুর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। একইসঙ্গে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং লস অ্যঞ্জেলেস কন্স্যুলেটেও বিনিয়োগের বিশেষ সেল খোলা হলে আগ্রহী প্রবাসীরা স্বস্তি পাবেন। প্রবাসী আমিনুল ইসলাম খান বলেন, রেমিটেন্সের মাত্রা অনেক বেশি হবে যদি দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোকেও বৈধভাবে রেমিটেন্সের আওতায় নেওয়া যায়। তারা প্রতিনিয়ত বিপুল টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। তবে তা বৈধভাবে সম্ভব হচ্ছে না। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন, যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রধান কার্যনির্বাহী দেবশ্রী মিত্র, যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহযোগী পরিচালক ওয়াসেফ চৌধুরী, নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সুপারভাইজিং অডিটর ইমতিয়াজ চৌধুরী, নিউ ইয়র্কে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কার্যনির্বাহী কাজী হেলাল আহমেদ, এসএফ গ্লোবাল হোল্ডিংস এর পরিচালক নাসিম আলী নিউ ইয়র্কে ডেপুটি কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল হাসান, ওয়াশিংটন ডিসিতে দূতাবাসের ইকনোমিক মিনিস্টার মেহদী হাসান, জাতিসংঘে মিশনের ইকোনমিক মিনিস্টার মাহমুদুল হাসান, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জিয়া করিম, ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের স্কুল অব ফার্মেসির সহকারী ক্লিনিক্যাল প্রফেসর ফারজানা মুসাউইস,সাংবাদিক ফজলুর রহমান এবং আমেরিকান ব্যবসায়ী উইলিয়াম লায়ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Leave the field below empty!